আমি মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার একদম প্রত্যন্ত্য গ্রাম থেকে গত প্রায় ৩ বছর থেকে ফ্রিল্যান্সিং এর সাথে জড়িত আছি। আমার গ্রামের কথা যদি বলি: বৃষ্টির দিনে কাদা আর রোদের দিনে ধুলোর সাথে চলাফেরা করতে হয়। একটু আইডিয়া করেন তো তাহলে নেটওয়ার্ক ও ইলেক্ট্রিসিটির অবস্থা কেমন হতে পারে? বিশেষ করে এই ঝড়-বৃষ্টির সিজনে?
আচ্ছা আমি বলি! আমি যখন কাজ শেখা শুরু করি। তখন আমাদের এলাকায় ইলেকট্রিসিটি এতো দূর্বল ছিলো যে, একটু ঝড়-বৃষ্টি, ভালো লেভেলের বাতাস দিলেই বারবার লোডশেডিং করতো। অনেক সময় তো গাছের ডাল পড়ে লাইন ছিড়ে দিনের পর দিন বিদ্যুৎ থাকতো না।
নেটওয়ার্কের কথা যদি বলি। ঘরের ভিতরে আসলে নেট 2G আবার অনেক সময় থাকতো না। এখনো সেইম সমস্যা। আবার বাইরে বের হলে মোটামুটি ইন্টারনেট চালানোর মতো নেট থাকে। আর তখন ওয়াইফাই এর ব্যবস্থা তো আশে পাশে কোথাও ছিলো না।
এজন্য আমি যখন কাজ শিখি। প্রথম দিকটা আমি আমাদের দোকানেই দিন ও রাত্রী যাপন করতাম। কারন সেখানে ভালো ইলেকট্রিসিটি আর নেটওয়ার্কটাও মোটামুটি ভালোই ছিলো। আমি আমার স্টোরি বলার জন্য পোষ্ট লিখছি না। বরং আমার সমস্যাগুলো তুলে ধরলাম। এবার কিভাবে এর থেকে সমাধান পাচ্ছি সেটা বলি…
প্রথমত বিদ্যুতের সমস্যা। একটা সময় বিদ্যুতের ভোল্টেজ এর সমস্যা দুর হয়ে যায় একটা সময়। কিন্তু যেহেতু আমরা গ্রামে আছি। ঝড় বৃষ্টির দিনে লোড শেডিং এর সমস্যা তো লেগেই আছে। একটা সময় যখন কাজের চাপ বেড়ে যায় তখনই শুরু হয় প্যারা। লোডশেডিং এর প্যারায় ল্যাপটপ কিনেছি। তাতেও কুল পাচ্ছি না। আমার মনে আছে একবার টানা ৩ দিন বিদ্যুত ছিলো না। কোনো কাজ করতে পারিনি। অর্ডারগুলোও লেট হচ্ছে। পরে বাধ্য হয়ে টাউনে হোটেলে চলে যাই। আর ঐদিনই আমার কাজের রুমে আইপিএস লাগাই।
আইপিএস লাগানোর পরে আলহামদুলিল্লাহ বিদ্যুতের ভোগান্তি 95% কমে গেছে। আপনি যদি আমার মতো গ্রামে থেকে কাজ করেন, আর ফ্রিল্যান্সিং করে মোটামুটি একটা আনিং আসে সাথে আর বিদ্যুতের সমস্যা থাকে। আমি সাজেস্ট করবো একটা আইপি এস নেন। এটা আপনাকে অনেক বেশি হেল্প করবে। বাজেট আইডিয়া: আমি ২৮ হাজার টাকা দিয়ে একদম নতুন নিয়েছি যেটা দুইটা পিসি ও একটা ফ্যান, রুমের লাইট মোটামুটি ৫-৮ ঘন্টার মতো ব্যাকাপ দেয়। তবে আপনি আপনার চাহিদা মতো তৈরী করে নেন। ১২-১৫ হাজারেও অনেকে মেনুয়ালি সবকিছু করে দিতে পারে। আপনার এলাকা/টাউনে একটু ঘাটাঘাটি করলে আসা করি পেয়ে যাবেন। যদিও এখন বড়-সড় ঝড় না হলে ১-২ ঘন্টার মধ্যে বিদ্যুৎ চলে আসে। তাও লোডশেডিং এর শেষ নাই।
এবার আসি ইন্টারনেট সমস্যা। আমি প্রথম দিক থেকেই পকেট রাউটার ইউজ করতাম। এটা মোবাইল ডাটা কিনে সীমের মাধ্যমেই ইউজ করতে হয়। একটা পকেট রাউটার দিয়ে অনেকগুলো ডিভাইস একসাথে ইউজ করা যায়। আর এটা চার্জ দিয়ে চালাতে হয়, সেক্ষেত্রে আপনি কোথাও ঘুরতে গেলে এটা সাথে করে নিতে পারবেন। পকেট রাউটার ও ৫-৭ ঘন্টা ব্যাকাপ দেয় ফুল চার্জে। তবে চার্জে লাগানো অবস্থাতেও ইউজ করা যায়। বাজেট আইডিয়া: ২-৫ হাজারেও পকেট রাউটার পাওয়া যায়। আরো দামি ও আছে বর্তমানে।
অনেকে মোবাইল থেকে হটস্পট এর মাধ্যমে ইউজ করে থাকেন। সেক্ষেত্রে মোবাইলে আলাদা একটা প্রেসার থাকে। আর পকেট রাউটার হলে মোবাইলে সেই প্রেসারটা পড়ছে না। এমনকি পকেট রাউটার ঘরের বাইরে রেখেও ওয়াইফাই সংযোগ দিয়ে মোটামুটি মোবাইলের থেকে ভালো ইন্টারনেট পাওয়া যায়।
বর্তমানে আমার ব্রডব্যান্ড আছে। কিন্তু গ্রাম থেকে যারা ব্রডব্যান্ড ইউজ করে তারা জানে কতটা প্রবলেম নিয়ে ব্রডব্যান্ড ইউজ করতে হয়। আমাদের তো প্রতি মাসে ১০-১৫ দিনেই ব্রডব্যান্ড এর নানান সমস্যা থাকে। কিন্তু বিকল্প কোনো ওয়াইফাই প্রোভাইডার না থাকায় সমস্যা নিয়ে এটাই ইউজ করতে হচ্ছে। আর এই সমস্যাগুলোর অলটারনেটিভ হিসেবে আমি পকেট রাউটার এখনো ইউজ করি।
আশা করি এ দুটি উপায় আপনার কাজের গতি আরো কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিবে। নেক্সট এ কি বিষয়ে জানতে চান কমেন্টে জানান। আমিও আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করবো উত্তর দেয়ার।