ঈদের ৩য় দিন তথা ০৫ মে ২০২২ আমরা কুলাউড়ার ১৩ জন ও সিলেটের ৫ জন মিলে মোট ১৮ জনের একটি টিম পূর্বাঞ্চলের তথা সিলেট বিভাগের সর্বোচ্চ সীমা (সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ১১০০ ফুট উচ্চতা) জয় করে আসলাম। যার এক পাশে ইন্ডিয়া ও অন্য পাশে বাংলাদেশ।
যেহেতু আমাদের কুলাউড়া উপজেলাতেই। তাই নির্ধারিত স্থানে গিয়ে আমরা সকাল সাড়ে আট টায় হাটা শুরু করি। পাহাড়ি আঁকা-বাঁকা, উচু-নিচু রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যগুলো উপভোগ করছিলাম।
মাঝে মাঝে কিছু বিরতি নিয়ে নিয়ে আমরা হাঁটতে ঘন্টাখানেক পড়ে আমরা বেগুনছড়া পুঞ্জিতে (খাসিয়া পল্লী) পৌছাই। এরপর শুরু হয় ভয়ংকর রাস্তাগুলো। এতো ভয়ংকর যে পা কোনোভাবে স্লিপ করলেই সোজা নিচে চলে যেতে হবে।
আরো কিছুপথ যেতেই শুরু হয় বৃষ্টি। যেখানে ওয়েদারে ছিলো সারাদিন রোদ হবে। আমরাও সেই প্রিপারেশন নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টি চলে আসার মানে সিলেবাসের বাইরে প্রশ্ন চলে আসা বা সৌদি আরবের আগে এবার আফগানিস্তান ও চাঁদপুরবাসীর ঈদ পালনের মতো। যাইহোক বৃষ্টি আসাটায় একদিকে লাভ ও হলো। কারন প্রচন্ড রোদের মাঝে শরীরে কিছুটা এনার্জি চলে আসলো।
নীরব ভাই, সোলেমান ভাই তারা তো আর কোনোভাবেই সামনে যেতে চাচ্ছে না। তাদের এক কথা এখান থেকেই তারা ব্যাক করবে। অনেক বুঝালাম যে সামনে আর কোনো কষ্টের রাস্তা নাই তাও কাজ হচ্ছে না। আমি তাদেরকে বুঝাচ্ছি অথচ আমি নিজেও জানি না সামনে যে আরো ভয়ংকর রাস্তা আছে। যাইহোক বৃষ্টি একটু থামার পর রাজি হলো এবং আমরা আবার শুরু করলাম হাটা।
এতোদূর আসতে যা কষ্ট হয়েছে। সামনের রাস্তাগুলো আরো বেশি কষ্ট হয়েছে। কারন বৃষ্টি হওয়ার কারনে রাস্তাগুলো একদম পিচ্ছিল হয়ে গেছে। আর পাহাড়ি রাস্তা তো আপনারাই বুঝতে পারছেনই। বাঁশ বাগানের মাঝে সরু রাস্তা দিয়ে হাতের লাটিতে ভর করে করেই উপরে উঠছিলাম। এডভেঞ্চার কাকে বলে সবাই এখানেই টের পেয়েছিলো। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে বিরতিহীন হাটায় সাড়ে ১১ টার দিকে আমরা একদম চুড়ায় পৌছে গেছি।
কালো পাহাড়ের একদম চুড়ায় উঠার পর বৃষ্টিটা আরো বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে যে সেখানে দাড়ানোটাও সম্ভব ছিলো না। ১০-১৫ মিনিট দাঁড়িয়ে আলী ভাইয়ের ওয়াটারপ্রোফ মোবাইল দিয়ে কিছু ছবি তুলে আমরা আবার ব্যাক করেছি। কিন্তু এবার তো আসল খেলা। পাহাড়ের উঠা যতটা না কষ্ট, নামা তার থেকেও বেশি কষ্ট। বিশ্বাস না হলে একদিন ট্রাই করেন! সরচরাচর যেখানে মানুষজনের তেমন চলাফেরা নাই। উপর থেকে বৃষ্টি হচ্ছে আর পিচ্ছিল রাস্তা বেয়ে নামতে গিয়েই বারবার স্লিপ খেতে হচ্ছে। কয়েকজন তো বারবার পড়েও যাচ্ছিলো। বন্ধু শাওন তো একটানা দুইবার পড়ে গেছিলো। তারপর তারে যেই মন্ত্র শিখিয়ে দিয়েছি আর পড়তে হয়নাই।
যাইহোক, আমরা দুপুর ১২ টার দিকে ব্যাক করে বিকেল ৪টার দিকে ক্লান শরীরে গাড়ির পাশে ব্যাক করেছি। মাঝ পথে অবশ্যই অনেকবারই বিরতী নিয়েছি। মোবাইল এপ্স এর হিসেব অনুযায়ী আমরা ২২-২৫ হাজার কদম হেঁটেছি পাহাড়ি রাস্তায়।
নেটওয়ার্কের বাইরে এমন ট্যুরগুলো আমার পার্সোনালি অনেক ভালো লাগে। সাধারনত কোথাও ঘুরতে গেলে সবাই সবার মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকি। কেউ কারো সাথে কথা বলারও টাইম নাই। আর নেটওয়ার্কের বাইরে ট্যুরগুলোতে গল্প, আড্ডা, হৈ-হুল্লোড় সবই থাকে। এ যেনো এক অন্যরকম অনুভূতি…











